রোযার চাঁদ

রোযা বা রোজা ফার্সি শব্দ ( روزہ )।একে  আরবিতে সাউম বলা হয় বহুবচনে সিয়াম।( صوم ) বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয় সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচারকামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারেপ্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমযান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ, (فرض ) যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।



রোযার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

"ওহে! যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার"।
— সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩

হযরত আদম যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাওবাহ করেছিলেন তখন ৩০ দিন পর্যন্ত তার তাওবাহ কবুল হয়নি। ৩০ দিন পর তার তাওবাহ কবুল হয়। তারপর তার সন্তানদের উপরে ৩০টি রোযা ফরয করে দেয়া হয়। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খণ্ড ১০২-১০৩ পৃষ্ঠা)।

রোযার উদ্দেশ্যঃ

রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলোআল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাপাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা।
কুরআনে বলা হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছেযেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরযাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো"।
— সূরা বাকারাআয়াত ১৮৩

আরও বলা হয়েছে,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ


"রমযান মাসযাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবেসে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেনতার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।"
— সূরা বাকারা: ১৮৫


রোযার ফজিলতঃ


রমজানের একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম হচ্ছে,এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়,মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জিবীত করে। সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এই মর্মে মহানবী ইরশাদ করেছেন,
"রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি হলো তার ইফতারের সময়আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।"
— (বুখারী ও মুসলিম)

রোজার শর্তঃ

রোজার কিছু মৌলিক আচার আছে। যা ফরজ বলে চিহ্নিত। সুস্থ-সবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কিন্তু শারীরিক অসমর্থতার কারণে সে এ দায়িত্ব থেকে আপাতভাবে মুক্তি পেতে পারে। এর প্রতিবিধানে রয়েছে কাজা ও কাফফারার বিধান। নিচে রোজার ফরজ ও শর্তগুলো দেওয়া হলো-

রোজার ৩ ফরজ :

  1.         নিয়ত করা
  2.          সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা
  3.          যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।

রোজা রাখার ৪ শর্ত :

  1.          মুসলিম হওয়া
  2.          বালেগ হওয়া
  3.          অক্ষম না হওয়া
  4.          ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।

রোজা ভঙ্গ হলেঃ

বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবেততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে।
·         একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
·         যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তবে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে। কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকিরমিসকিনগরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খাওয়াতে হবে।
·         গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।

যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে

  •          মুসাফির অবস্থায়
  •          রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে
  •          মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে
  •          এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে
  •          শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে
  •          কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
  •          মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়

যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়

  •          ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে
  •          পাথরের কণালোহার টুকরাফলের বিচি গিলে ফেললে
  •          ডুশ গ্রহণ করলে
  •          বিন্দু পরিমান কোন খাবার খেলে তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা মনের ভুলে খেলেও রোজা ভাংবে না তবে মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে
  •          নাকে বা কানে ওষুধ দিলে (যদি তা পেটে পৌঁছে)
  •          মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছে
  •          স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়

 কিছু কথাঃ

কিছুদিন পর আমাদের সামনে পবিত্র রমযান মাস আসতেছে।এ মাসের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।তাই আমাদেরও উচিত বেশী বেশী এবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত হাসিল করা।